*জলপরীর প্রেমে*
পার্টঃ২৬(শেষ)
লেখকঃহৃদয় বাপ্পী(পিচ্চি)
।।।।
।।।।
।।।।
সময় চলে আসলো পাতালপুরীতে যাওয়ার।।।আমি নিলা আর জারা আমার সাথে আসলো।।।আর আমাদের সুরক্ষার জন্য সেনাপতি রনুইক দে আমাদের সাথে চললো।।।অবশ্য সুরক্ষা বললে ভুল হবে।।।তিনি মূলত আমার প্লানের সাথে যাচ্ছে।।।আমরা রাজ্যের পশ্চিম দিকের একটা জায়গায় চলে আসলাম।।।সেনাপতির সব সেনারা এসে উপস্থিত হয়েছে আমাদের পিছনে।।।আমার হুকুমেই এরা হামলা করবে।।।জায়গাটায় সেনাপতির সাথে আগেও একবার এসেছি।।তাই সমস্যা আশে পাশ আর দেখছি না।।।বলতে গেলে পুরো জগন্য একটা জায়গা।।।দানব রাজ্যের সব ময়লা আর আবর্জনা ফেলা হয় এইখানে।।।আর এইখানেই তিনরাজ্যে যাওয়ার পোর্টাল বানানো হয়েছে।।।কি অদ্ভুদ।।।পাতালপুরীতে রয়েছে টেলিপর্টেশন ডিভাইস।।।দানবরাজ্যে রয়েছে পোর্টাল গেইট।।।তাহলে জলপুরী আর আকাশপুরীতেও কিছু এমন আছে যেগুলো আমার অজানা।।।থাক রাজ্য পাওয়ার পর নাহয় সেটাও জানা হয়ে যাবে।।।কিন্তু আমার সাথে যে বিশ্বাস ঘাতকটা করলো আমি সেটার বিচার ঠিকই করবো।।আমি তো এসব চাইনি।।তারা আমার কাছে বললে আমি নিজে থেকেই ছেড়ে দিতাম সব।।।
।
এইসবের অভিনয় শুধু ছিলো এই ট্রিশুল পাওয়ার জন্য।।।ঠিক আছে আমি দেখিয়ে দিবো তাদেরকে এই ট্রিশুল দিয়েই।।।।আমরা চারজন ঢুকলাম পোর্টালের ভিতর দিয়ে।।।এটা দিয়েই পাতালপুরিতে যেতে হবে।।।ঢোকার পরেই আমরা পাতালপুরিতে পৌছে গেলাম।।।
.
--এখানেও কি পোর্টাল বানানো।(আমি)
.
--না মহারাজ।।।আমাদের পোর্টাল গুলো যেকোনো সময় যেকোনো জায়গায় বসতে পারবে।।।শুধু আপনার ভাবনার উপরেই নির্ভর করবে সেটা।।।(সেনাপতি)
.
--ওওওও।।।।তা বেশ ভালো আয়োজনই তো করেছে আনিল টিটান।।।তার ছেলের বিয়ে আমাদের তো তাকে সারপ্রাইজ দেওয়ার দরকার চলুন একটু চমকিয়ে দিয়ে আসা যাক।(আমি)
.
--হুমমম চলুন মহারাজ।(সেনাপতি)
।।।।।
।।।।।
নিলার রাজ্য ছিলো এটা।।।তাই আমি ওকেই জারাকে নিয়ে একটা সুরক্ষামূলক জায়গায় চলে যেতে বল্লাম।।।ও তাই করলো।।।
আমি আর রনইক দে চলে আসলাম রাজ প্রাসাদের সামনে।।।অনেক সুন্দর করে আয়োজন করা হয়েছে।।।নিলার বাবা যে আয়োজন করেছিলো সেটা তো কিছুই না।।।কিন্তু আনিল যেটা করছে সেটা তো মাথায় হাত দিয়ে দেখার মতো হয়েছে।।।আমি দাড়িয়ে দাড়িয়ে দেখতে থাকলাম সব।।আমাকে দেখে সবাই অবাক হলেও আমার সাথে দানবরাজ্যের বিশালদেহী সেনাপতিকে দেখে আর কেউ কিছু বলছে না।।।বলবেই বা কি।।।একটা পাড়া দিলেই তো গলে যাবে।।।তাই হয়তো ভয়ে সবাই চুপ রয়েছে।।।আমি সোজা রাজ প্রাসাদে চলে আসলাম।।।দেখি আনিল মিয়া বসে ছিলেন রাজ সিংহাসনে।।।তার পাশেই ছিলো জলপুরীর রানী মানে জারার মা।।।আর পাশে আরেকজন ছিলো যাকে দেখে মনে হচ্ছিলো হয়তো এটাই রানীর অবৈধ আনিলের সন্তান।।।হ্যা চেহারাই মিল আছে এটাই ওর সন্তান মানে বর্তমান জলপুরীর রাজা।
.
--আপনি বেচে আছেন!(বিস্মিত হয়ে জিজ্ঞাসা করলো আনিল)
.
--হ্যা মারতে চাইলেই কি মরা যায়।।।(আমি)
.
--সেনাপতি এই বান্দাকে এখনি বন্ধি করে ফেলো।(আনিল একটু ভয়েই আদেশ দিলেন)
.
--হুমমম করুন আসুন।(আমার পাশে এসে আমার সেনাপতি রনইক দে দাড়ালো)
.
--দানবরাজ্যের সেনাপতি।।আপনি একা যে।।।মহারাজ কি আসছেন না????(আনিল)
.
--উনিই আমাদের নতুন মহারাজ।।।ওনার কাছেই রয়েছে হারকিউমাসের মহান ট্রিশুল।(সেনাপতি)
.
--কি?????(পুরো রাজসভা আশ্চর্য হয়ে গেছে)
.
--আমাকে কয়েত করতে আসুন আমি কি মানা করেছি।।।।সেনাপতি আপনি এখনি আমাদের সেনাকে সংবাদ পাঠিয়ে দিন হামলা করতে।(আমি)
.
--দেখুন মহারাজ আপনি উত্তেজিত হবেন না।।।এখন তো যুদ্ধের সময় না।।।আমরা বসে কথা বলি?(আকাপুরীর রাজা রুহিস)
.
--এখানে বৈঠক এর কিছু দেখি না আমি।।।এখানে শান্তি পূর্ন আন্দোলন করতে আমি আসি নি।(আমি)
.
--তাহলে কি চান আপনি?(আনিলের ছেলে আদিল)
.
--আমি কি চাই???আমি সব কিছু চাই।।।আমি জলপুরী,আকাশপুরী,পাতালপুরী সব কিছুই চাই।।।।এই পুরো সম্রাজ্যই আমি চাই।।।(আমি)
.
--কি এতো বড় কথা।।।আমার তলোয়ারের সাথে যুদ্ধ করেই সব পেতে হবে।(আদিল)
.
--ঠিক আছে।।।(আমি মুচকি হাসলাম)
।।।।
।।।।
আদিল রেগে আমার দিকে এগিয়ে আসছিলো।।।আনিল ভয় পেয়ে ফিরিয়ে নিলো তার ছেলেকে।
.
--বাবা তোমার মাথা ঠিক নাই হয়তো।।।তুমি একটু শান্ত হও।।।মহারাজ যা হয়ে যাওয়ার হয়ে গেছে।।।আপনি তো যুদ্ধ করতে চাচ্ছেন এতে তো অনেক অসহায় এর ক্ষতি হবে।।।সেটা না করে আমরা চুপ চাপ বসে কথা বলি।(আনিল)
.
--বিশ্বাস ঘাতকের কথা আর কি শুনবো।।।আমি আমার সিদ্ধান্তে অটল।।।এখনি আত্মসমর্পণ করুন নাহলে অবস্থা হয়তো ভয়াবহ হতে সময় লাগবে না।(আমি)
.
--হাহাহা।।।(হঠাৎই আনিল হেসে উঠলো জোরে)
.
--আমি কি হাসার কথা বলেছি।(আমি)
.
--হয়তো শুনেছেন মানুষ যুদ্ধ এবং ভালোবাসার জন্য সব করতে পারেন।।।আপনি হয়তো ভালোবাসার জন্য সব করতে পারবেন আর আমি যুদ্ধের জন্য।।।আপনার কাছে ট্রিশুল থাকলেও আমার কাছে আছে আপনার ভালোবাসা।।।।(আনিল)
.
--কি???(আমি পিছনে তাকিয়ে দেখলাম নিলা আর জারাকে একটা বড় খাচায় বন্দি করে নিয়ে আসছে।।।আমার দিকে নিশ্পাপ চোখে তাকিয়ে ছিলো)
.
--এতো বড় সাহস।(আমি ট্রিশুল দিয়ে একটা এনার্জি বল মারতে যাবো তখনই আনিল বললো)
.
--কি করার চেষ্টা করবেন না।।।সোজা ট্রিশুলটা আমার হাতে দিয়ে দিন।।।নাহলে আপনার ভালোবাসাকে।(আনিলের আদেশেই বিদ্যুৎ এর শক দিতে লাগলো দুইজন নিলা আর জারাকে)
.
--....(আমি ওদের দিকে এগিয়ে যাবো)
.
--এই ভুল মোটেও করবেন না।।।করলে আপনার ভালোবাসার উপরে শকের মাত্রা বেড়ে যাবে।।।আর এক পা বারালে ওরা পুড়ে কয়লা হয়ে যাবে।(আনিল)
.
--এটা বন্ধ করুন।(আমি)
.
--তাহলে যে ট্রিশুলটা আমার কাছে দিতে হবে।।।(আনিল)
।।।।।
।।।।।
আমার রাগ পুরো বেরে গেলো।।।আমি সেনাপতিকে চোখের ইশারায় বুছিয়ে দিলাম কি করতে হবে।।।
.
--হ্যা ঠিক আছে আমি হেরে গেলাম।।।ট্রিশুলটা এখন আপনার।।।আপনিই হবেন মহাজাগতিক রাজা।(আমি)
.....
।।।।
আমি ট্রিশুলটা এগিয়ে দিলাম।।।আনিল সিংহাসন থেকে নিচে নেমে আসলো।।।আমার কাছে আসার সময়ই আমার সেনাপতি তার বিশাল হাত দিয়ে নিলা আর জারার খাচার পাশে থাকা দুইজনকে দিলো বারি এক বারিতেই তাই শেষ।।।পুরো চ্যাপ্টা হয়ে গেছে।।।আমি লাথি দিলাম আনিলের বুকে সে গিয়ে পরলো তার সিংহাসনের চেয়ারের উপরে।।।আমি সেনাপতিকে আদেশ দেওয়ায় সে নিলা আর জারাকে দুই হাতে নিয়ে রাজপ্রাসাদের দেয়াল ভেঙে বাইরে চলে গেলো।।।এখন পুরো রাজ দরবার আতঙ্কিত হয়ে গেলো।।।
.
--ভেবেছিলাম সবাইকে মাফ করে দিবো।।।ভুল মানুস দ্বারাও হয়।।।আবার জ্বীন পরী দিয়েও হয়।।।তাই চেয়েছিলাম সবাইকে মাফ করে দিবো।।।কিন্তু কাজটা একটু বেশী করে ফেলেছেন আপনারা।।।(আমি)
.
--আমরা আপনার সাথে যুদ্ধ করতে প্রস্তুত।(আদিল)
.
--চেয়েছিলাম আপনাদের শুধু আটক করবো।।।ভাবি নি এতোটা রাগিয়ে দিবেন আমাকে।।।আমার কাছে প্রথমে বললেই হতো সিংহাসন আপনাদের দরকার।।।কিন্তু তা না বলে এর মাঝে আমার পরিবারকেও নিয়ে আসছিলেন।।।আপনাদের মতো মানুষ।।।সরি আপনাদের মতো জ্বীনদের তো বেচে থাকারও অধিকার থাকতে পারে না।।।(আমি)
.।।।।
।।।।
আনিল আর তার ছেলে দুজন মিলেই আমার উপর হামলা করে আসলো।।।আমি ছোট একটা এনার্জি বল ছুরলাম তাদের উপর।।।তাতে তাদের অবস্থা খুবই ভয়াবহ হলো।।।
.
--এই ট্রিশুলের লোভেই তো ছিলেন আনিল তাই না।।।আজকে শেষ দেখা দেখে নিন এই অস্ত্র কি করতে পারে।(আমি)
।।।।।
।।।।।
আমি রাগবশতই ট্রিশুলটা আঘাত করলাম খুব জোরে।।।সেনাপতিকে আগেই বলে রেখেছিলাম আশে পাশের সবাইকে সরিয়ে ফেলতে সে হয়তো তাই করে ফেলছে।।।আর এতোক্ষনে সব দানবরাও রাজ্যে ঢুকে গেছে।।।আমিও এক এক করে দেখতে লাগলাম পুরো রাজপ্রাসাদ চুরমার হওয়া।।।রাগটা বেশী থাকাতে হয়তো দুইবার যেই এট্যাক ব্যবহার করেছি সেটা না হয়ে এবার ভয়ানক কিছু একটাই হলো।।।সব কিছু আমার চারপাশ দিয়ে ঘুরতে থাকলো।।।একটার সাথে আরেকটা বারি খেতে লাগলো।।।এমন মনে হচ্ছিলো কোনো ঘূর্নিঝড় হচ্ছিলো।।।হঠাৎই একটা আলোর ঝলক হলো।।।আর সব থেমে গেলো।।।আর আমার আশে পাশে যা ছিলো সব নিমিশেষে ধুলো হয়ে নিচে পরতে লাগলো।
।
আমি ভয়াবহতা দেখে নিজেই চমকে গেলাম।।।এই অস্ত্র যে এতোটা মারাত্মক হবে আমি সে কল্পনাও করতে পারি না।।।পুরো অর্ধেক শহরকে তসনজ করে দিয়েছে।।।।বুঝলাম একটু বেশীই ব্যবহার হয়ে গেছে।।।হয়তো এতো কিছুর দরকার ছিলো না।।।না জানি কত মানুষ মারা গিয়েছে তার ঠিক নাই।।।দেখি সেনাপতি আমার কাছে আসলো।
.
--মহারাজ।(সেনাপতি)
.
--আমার রাগটা একটি বেশীই হয়ে গেছে সেনাপতি।।।কত যে মারা গিয়েছে তার ঠিক নাই।(আমি)
.
--মহারাজ আপনি চিন্তা করবেন না।।।আপনার অবগতির জন্য জানাচ্ছি একজন ও মারা যায় নি।।।আপনি তো বলছিলেন রাজপ্রাসাদ থেকে দূরে সবাইকে জেনো নিয়ে যায়।।।।কিন্তু দেখতে পেলাম সব কিছু ভয়াবহ হচ্ছিলো তাই তাদের কে আমরা নিয়ে আমরা মধ্যভাগ ত্যাগ করি।(সেনাপতি)
.
--কেউ তো আহত হয়নি?(আমি)
.
--না মহারাজ কেউই আহত হয় নি।(সেনাপতি)
.
--তাহলে এখন।(আমি)
.
--মহারাজ এখন আপনিই পুরো সম্রাজ্যের রাজা।(সেনাপতি)
.
--ও হ্যা।।।সব রাজারাই তো মারা গেছে।।।সাথে জলপুরীর রানীও।।।সব বিশ্বাস ঘাতকরা মারা গেছে।(আমি)
.
--হুমমম হুজুর দেখুন সব প্রজারা এদিকেই আসছে।(সেনাপতি)
।।।।
।।।।
আমি দেখলাম পাতালপুরী এবং জলপুরী এবং আকাশপুরীর অনেক প্রজারা আমার সামনে আসছে।।।ভয়ে আমার দিকেই তাকিয়ে আছে।।।আমি ট্রিশুলটা উঠিয়ে বল্লাম,
.
--আমাকে রাজা মানতে অমত পোষন আছে কার।(আমি)
.
--.....(সবাই মাথা নিচু করে রইলো)
.
--রাজা হৃদয় টিটান দীর্ঘজীবী হোক।(সেনাপতি)
.
--রাজা হৃদয় টিটান দীর্ঘজীবী হোক।।।(সবাই একসাথে বলে উঠলো)
.
--কারো কোনো সমস্যা নাই তো।(আমি)
.
--....(এবারো সবাই চুপ)
.
--সেনাপতি আপনি আবার ও এই রাজ্যে যা ক্ষতি হয়েছে সেটার মেরামতের দায়িত্ব নিন।(আমি)
.
--জ্বী মহারাজ।।।আমাকে তিনদিনের সময় দিন।।।যা ধ্বংস হয়েছে তা নতুন হয়ে যাবে।(সেনাপতি)
.
--হুমমম।(আমি)
.
--এক মিনিট।(হঠাৎ মোহনা বলে উঠলো)
.
--কিছু কি বলবা।(আমি)
.
--আমার হবু স্বামীকে তো মেরেই ফেলছো।।আর তুমি তো আমাকে বিয়েই করবে না।।আমার বাবা মারা গেলেও কি।।।তার সন্তান হিসেবে আমি রাজকন্যা মোহনা বেচে আছি।।।আকাশপুরী দেখার দায়িত্ব আমার।।।যদি আমার রাজ্য পেতে চাও হয়তো আমাকে মারতে হবে নাহলে?(মোহনা)
.
--নাইলে???(আমি)
.
--আমাকে বিয়ে করতে হবে।(মোহনা)
.
--কি????(আমি)
.
--হ্যা।।।।
।।।
।।।
আমি তো এভাবে কোনো মেয়েকে মারতে পারি না।।।আর মোহনা আমাকে ভালোবাসে আমি তাকে কি ভালোবাসার দোষে মারবো।।।
.
--ঠিক আছে।(আমি নিলা আর জারার দিকে তাকিয়ে বল্লাম)
।।।।
।।।।
সাথে সাথেই মোহনা আমাকে জরিয়ে ধরলো।।।শুধু মোহনা না আমার বুকে তিন রাজকন্যায় চলে আসলো।।।।।।চাই নি আর কোনো যুদ্ধ করতে।।।যুদ্ধ জিনিসটা আসলেই ভয়ানক।।।কি করে ফেলেছি আবারও একটু দেখলাম।।।
।
একটা দীর্ঘনিশ্বাস ফেললাম।।কারন অবশেষে শেষ হয়ে গেছে।
।।।।।
।।।।
।।।
।।
।
(((((সমাপ্ত)))))
।
।।
।।।
।।।।
।।।।।