*জলপরীর প্রেমে*
পার্টঃ১৮
লেখকঃহৃদয় বাপ্পী(পিচ্চি)
।।।।।
।।।।।
।।।।।
.
--বল্লেই হলো আমি বিয়ের জন্য লড়েছি নাকি।(আমি)
.
--দেখুন আপনি তাকে বিয়ে না করলে তাকে কেউই বিয়ে করবে না।(আনিল)
.
--আমি বিয়ে না করলে কেউ করবে না মানে।।সে একজন সুন্দরী রাজকুমারী।।যে কেউ তাকে বিয়ে করতে পারবে।(আমি)
.
--এটাই নিয়ম হুজুর।(আনিল)
.
--আপনাদের এই নিয়ম মানতে মানতে আমি শেষ হয়ে গেলাম।।।।(আমি)
.
--কিছুই করার নাই।।।একজন রাজার অনেক গুলো রানী থাকতেই পারে এটা স্বাভাবিক।(আনিল)
.
--কিন্তু আমি জারাকে ভালোবাসি।(আমি)
.
--এটা মানব মুখেই মানায় হুজুর।।দেখুন আপনার হাতে একজন রাজকুমারীর জীবন।আপনি কি করবেন কি করবেন না সেটা আমার বলার সাহসও নেই,কিংবা উপদেশ দেওয়ার সাহসও নেই।।।কিন্তু এটা বলতে পারবো।।এই বিয়ের মাধ্যমে আপনি এখানের রাজা হয়ে যেতে পারবেন।(আনিল)
.
--আমি তো রাজা আছিই।(আমি)
.
--আরে আমার কথা বুঝতে পারছেন না।।নিচের দুনিয়া মানে যেটাকে পাতালপুরী বলা হয়।।।এখানের সেনারা যদি আমাদের হাতে থাকে তাহলে সবই তো আমাদের।(আনিল)
.
--হ্যা সেটা অবশ্য ঠিক।।কিন্তু আমি বিয়ে করতে পারবো না নিলাকে।(আমি)
.
--সেটা আপনার মর্জি।।।আমাদের যদি ওকে বিয়ে করা ছাড়াই আপনি বের করতে পারেন তাহলে সমস্যা কোথায়।(আনিল)
.
--মানে?(আমি)
.
--মানে তখন তো ছিলাম পানির নিচে।।।কিন্তু এখন যেখানে আছি সেটা হলো মরুভূমির নিচে।।।এখানে আপনি পানি কোথাও পাবেন না।।আর তারা আপনাকে বিয়ে দিয়েই এখান থেকে বের হতে দিবে।(আনিল)
.
--আমি যদি তাও বের হয়ে যায়।(আমি)
.
--তাহলে ওরা এখনি আমাদের জলপুরীর উপরে যুদ্ধ ঘোষনা করবে।(আনিল)
.
--আমরা লড়তে প্রস্তুত।(আমি)
.
--সেটা কিভাবে হয় হুজুর।।আমাদের জলপুরীর প্রধান সেনাপতি আর তাদের রাজা বন্ধী।।।তারা কি করে যুদ্ধ করবে।(আনিল)
.
--তো আপনি কি বলছেন আমাকে বিয়ে করতেই হবে।(আমি)
.
--সেটা ছাড়া কোনো উপায় দেখি না।(আনিল)
.
--ঘুরিয়ে ফিরিয়ে তো এক কথায়।(আমি)
.
--সেটাই।(আনিল)
.
--ওকে ঠিক আছে রাজ্য রক্ষার জন্য নাহয় কাজটা করলাম।(আমি)
।।।।।।
।।।।।।
শুয়ে শুয়ে বিশ্রাম নিচ্ছিলাম।।।একটু আগেই কাটা জায়গা গুলো বেন্ডেজ করে দেওয়া হয়ছে।।।খুব লাগছে শরীরে।।সারা শরীরেই ব্যথা করছে।।।তাই একটু ঘুম ঘুম আসছিলো।।।চোখ বুঝে শুয়ে ছিলাম।এমন সময় এক রক্ষী আমাকে নিতে এলো।আমাকে নিয়ে সুন্দর একটা জামা পরিয়ে দিলো।।বিয়ে বলে কথা,একটু সুন্দর করে তো সাজতে হবে।।।সাজলামও সুন্দর করে।।।তারপর শুরু হলো বিয়ের আয়োজন।।।অনেকটা ধুমধামের মাধ্যমেই বিয়েটা হয়ে গেলো।।।।
।
আচ্ছা আমি কেনো শুধু শুধু সেনাপতির সাথে এই ট্রিশুলটার পিছনে পরে আছি।।।আমার তো এতো শক্তির প্রয়োজন নেই।।।মোটামুটি আমার কাছে যে শক্তি রয়েছে এতেই আমি আমার বোন আর জারাকে মুক্ত করে নিয়ে আসতে পারবো।।।।আর বাকিটুকু সাহায্য করার জন্য তো নিলা আমার সাথেই আছে।।।।।দেখা যাক কি করা যায়।আমাকে নিয়ে আসা হলো নিলার রুমে।।।অনেক সুন্দর করেই সাজানো হয়েছে রুমটা।।।সব জায়গায় শুধু ফুল আর ফুল।।।একটু আগেই নিলার বাবা মানে রাজার সাথে কথা হয়েছে।
।
কালকেই আমি আমার গন্তব্যে যেতে পারবো।।।এতে তার কোনে সমস্যা আর নেই।যতদিন সে বেচে আছেন ততদিন শুধু আমাকে জলপুরীর রাজা হয়েই থাকতে হবে।।।কিন্তু তার মৃত্যুর পর এই পাতালপুরীর আর জলপুরী দুইটাই আমার হবে।আমার এতো কিছু চাই না।।।আমি শুধু সুন্দর একটা জীবন চাই যেখানে এই কোনো কিছু থাকবে না।।।শুধু আমি আর আমার মনের মানুষ গুলো।আমি রুমে ছিলাম।।।।নিলা বসে ছিলো বিছানায়।।।আমি গিয়ে ওর পাশে বসলাম।
.
--দেখুন আমি আপনাকে বিয়ে করতে চাই নি।।। তাও কি করে যে হয়ে গেলো।আর আপনাকে বিয়ে না করলে নাকি যুদ্ধের হুমকি দিয়েছে আপনার বাবা সেটা আমার সেনাপতি বললো আমাকে তাই যুদ্ধটা আটকাতে আপনাকে বিয়ে করা।(আমি)
.
--তো এখনো কি আপনি বলবেন।।।যেভাবেই হোক বিয়ে তো হয়ে গেছে আমাদের।।।আপনি আমাকে তুমি করে বলবেন এখন থেকে।(নিলা)
.
--আরে না আপনিতেই ঠিক আছি।(আমি)
.
--আমি বলছি না বলতে।।।।আর জানেন আমি সব সময়ই চেয়েছি জেনো আপনি জিতে যান।।।আমি কিছুতেই চাই নি যে ঔ সেনাপতির সাথে আমার বিয়ে হোক।(নিলা)
.
--আপনি তো বিয়েই করতে চান নি তাহলে সেটা আশা করছেন কেনো?(আমি)
.
--থাক সেটা নাহয় না বল্লাম।।।(নিলা)
.
--না বলতে হবে।।।। বলেন।(আমি)
.
--আগে আমাকে তুমি করে বলেন তারপর।(নিলা)
.
--আমি কাউকে তুমি করে বললে আর কেউ আমাকে আপনি করে বললে ব্যাপারটা অনেক খারাপ লাগে।(আমি)
.
--ওওও ঠিক আছে আমি তোমাকে তুমি করে বলবো?(নিলা)
.
--এবার বলো কেনো?(আমি)
.
--তোমার সাথে প্রথম দেখার থেকেই বুঝে গিয়েছিলাম তোমার মাঝে অন্যরকম একটা জিনিস আছে।।যেটা আমাকে তোমার দিকে সব সময় টানতো।।।তোমাকে নিয়ে ভাবাতো আমাকে সব সময়।।।কি সেটা বুঝতে পারি নি।।।(নিলা)
.
--তো কি এখন বুঝতে পারছো?(আমি)
.
--এখনো বুঝতে পারছি না।।।কিন্তু জানো তোমার প্রতি আগ্রহ,টান সবই আমার আগের থেকে বেশী বেড়ে গেছে।।।কিন্তু কেনো সেটা জানি না।।।বাট এটা বলবো আমি তোমাকে ভালোবেসে ফেলেছি।(নিলা)
.
--কিন্তু আমি যে অন্য কাউকে ভালোবাসতাম।(আমি)
.
--তাম মানে তো ভালোবাসতে।।।।এখন তো বাসো না।।।।এখন আমি তোমার স্ত্রী।এখন আমাকেই তো ভালোবাসবে তুমি তাই না?(নিলা)
.
--ভালোবাসতাম বলতে বুঝিয়েছি ভালোবাসি তাকে।।।কিন্তু সে আর আমার বোন যে আকাশপুরীতে বন্ধী।(আমি)
.
--বুঝলাম না।।(নিলা)
।।।।
।।।।
আমি নিলাকে প্রথম থেকে কাহিনী শুনালাম।।।শুনে ও অনেকটা মন খারাপ করে ফেললো।।।কিন্তু আমি যে কিছুই করতে পারি না এই বিষয়ে।।।আমি যে জারাকে ভুলতে পারবো না।।।আবার এখন নিলাকেও ছারতে পারবো না।।।
।
নিলা আমার কাহিনী শুনে আমাকে শান্তনা দিয়ে বললো,
.
--দেখো তুমি দুঃখ পেয়ো না।।।তোমার বোন আর জারাকে নিয়ে আসার দায়িত্ব এখন আমারও।।।।শুধু তুমি আমাকে তোমার মনে একটু জায়গা দিয়ো।(নিলা)
.
--হুমমম সেটা দেখা যাবে।(আমি)
.
--হুমমম।(নিলা আমার কোলে মাথা দিলো)
।।।।
।।।।
আমার পায়ের ধুরায় কেটে গিয়েছিলো সেখানে বেন্দেজ করা।।।।আমি ব্যথায় কুকরিয়ে উঠলাম।
.
--কি হলো?(নিলা)
.
--কিছু না ঔখানে ব্যথা।(আমি)
.
--আমি তো পুরো ভুলেই গিয়েছিলাম।।।দারাও আমি ঔষদ এনে লাগিয়ে দিচ্ছি দেখবা সকালেই সব ঠিক হয়ে।(নিলা)
.
--হুমমম দাও।।।(আমি)
।।।।।
।।।।।
আমার বেন্ডেজ গুলো খুলে দিয়ে ঔষদ লাগিয়ে দিলো নিলা।।আজকেই বিয়ে হলো আর আজকেই এতো কেয়ার আমার উপরে।।।।অনেক ভালো লাগলো।।।কিন্তু আমার যে বোন আর জারাকে মুক্ত করতে হবে।।।নিজের সুখ নিয়ে ভাবার সময় আমার নেই।।।।আমাকে শুতে বললো নিলা।।।একটা কাথা দিয়ে দিলো আমার উপর দিয়ে।।।শুয়ে পরলাম কাথাটা নিয়ে।।।।এক ঘুমেই সকাল।।।।।
।
নিজের শরীরে ক্ষত আছে বলে এখন মনেই হচ্ছে না।।।সব টনাটনা এখন।।।।দেখি নিলা আমাকে জরিয়ে ধরে শুয়ে আছে।।।একদম কোলবালিশ বানিয়ে রাখছে।কিছু তো আর বলতে পারতেছি না।।।আর যাইহোক সে তো আমার বউ আমি তো তার হক নষ্ট করতে পারি না।।এতো কিছু ভাবার সময় নেই।।।।আচ্ছা আমি তো তখন ওদের কাছে টেলিপর্টার যন্ত্র দেখেছি।।।সেটা দিয়ে তো আমি সোজা চলে যেতে পারবো আকাশপুরীতে।।।।আর আমি তো বিনা যুদ্ধেই সমজোতার মাধ্যমে আমার কাজটি হাসিল করতে পারি।।।তাহলে সেনাপতি আমাকে এই বুদ্ধিটা দিতে পারলো না কেনো।।।যদি জলপুরী আর পাতালপুরী এক হয়ে যায়।।।তাহলে আকাশপুরীর সাধ্য হয় নাকি আমাদের উপরে কথা বলার।।। হ্যা এটা করলেই তো হয়ে যাচ্ছে।সেনাপতির মাথায় দেখছি কোনো বুদ্ধিই নাই।।।সব আমারই করতে হবে।।।।আচ্ছা সেটা যায় হোক আমাকে এখন রাজার সাথে মিটিং করতে হবে।আমিও নিলাকে আমার থেকে ছাড়িয়ে চলে আসলাম রাজ সিংহাসনে।।।।রাজার পাশের আসনে আমাকে বসতে দেওয়া হলো সেটাই রাজকুমার রা বসে থাকেন।।।এই রাজ্যের জন্য আমিই রাজকুমার।।।।
.
--আপনার সাথে আমার কিছু কথা ছিলো?(আমি)
.
--হুমমম বলুন।(রাজা)
.
--জ্বী আমি আকাশপুরীর সাথে যুদ্ধ ঘোষনা করতে চাই।(আমি)
.
--কিন্তু কারনটা কি?(রাজা)
.
--কারন আকাশপুরীর রাজকুমারী মোহনা আমার বোন এবং রাজা হিলোরাসের কন্যাকে অপহরন করে নিয়ে গেছে আকাশপুরীতে।।।(আমি)
.
--কি এতো বড় স্পর্ধা।।।।আপনি এখনি ঘোষনা পত্র পাঠিয়ে দিন আমার সৈন্য আপনার সাথেই আছে।(রাজা)
.
--কোনো যুদ্ধের আশা করি না আমি।।।আমি শুধু আমার বোন আর রাজকুমারীকে ফিরে পেতে চাই।।।তারা যদি আমাদের ফিরিয়ে দেই তাহলে আমি যুদ্ধের ধারনা পরিহার করতে পারি।(আমি)
.
--তাহলে সেটাই হবে।।।আমি আপনার হয়ে সংবাদ পাঠিয়ে দিচ্ছি।।।।(রাজা)
.
--জ্বী ধন্যবাদ।।।।(আমি)
।।।।।
।।।।।
আমার সামনেই রাজা ভিডিও কনফারেন্সে ফোন দিলো আকাশপুরীর রাজার সাথে।।।।
.
--আরে পাতালপুরীর রাজা যে কি ভেবে ফোন দিলেন।।।।(আকাশপুরীর রাজা মানে রাজা২)
.
--জরুরী একটা কাজে আপনাকে স্মরন করা।(রাজা)
.
--শুনলাম রাজকুমারীর বিয়ে দিয়ে দিলেন জলপুরীর রাজার সাথে সেটা একবারও বললেন ও না।।।আমাদের বন্ধুত্ব কি এই ছিলো?(রাজা২)
.
--আরে কি যে বলেন।।।রাজকুমারীর ব্যাপারটা তো জানেনই তাই তারাতারিই কাজটা সম্পূর্ন করে দিলাম।(রাজা)
.
--আচ্ছা যাইহোক জরুরী কাজটা কি আপনার?(রাজা২)
.
--সেটা হলো আমার জামাতা আপনার সাথে যুদ্ধ করার প্রস্তাব দিয়েছে আর যুদ্ধের কারন ও অনেক শক্ত।।।যে কারনে আমি ও আমার সৈন্য তাকে দিতে রাজি হয়েছি।(রাজা)
.
--কি বলেন।।।।জলপুরীর রাজা হিলোরাসের সাথে তো আমাদের শেষ চুক্তি হয়েছিলো যেখানে আমাদের সকল সমস্যার সমাধান হয়েছিলো তাহলে নতুন রাজা যুদ্ধ ঘোষনা করে কি দেখে?(রাজা২)
.
--আপনার রাজকুমারী মোহনা সে আমার জামাতার বোন আর রাজা হিলোরাসের কন্যাকে অপহরন করে নিয়ে গিয়েছে।।।।মানে দুই রাজকুমারীকে সে অপহরন করেছে।।।।বুঝতেই পারছেন কত বড় কারন এটা যুদ্ধের জন্য।।।আর আকাশপুরী মনে হয় না জলপুরী আর পাতালপুরীর সৈন্যের সাথে টিকতে পারবে।(রাজা)
.
--আমরা কি কোনো চুক্তি তে আসতে পারি না?(রাজা২)
.
--হ্যা পারবো না কেনো।।।একটাই চুক্তি।।।আপনি অপহরনকৃত রাজকুমারীদের ফেরত দিবেন।আর ক্ষমা চাইবেন আমার জামাতার কাছে।(রাজা)
.
--শর্তে আমি রাজি আছি।।।আমরা শান্তিপূর্ন ভাবে থাকতে চাই।।।কোনো যুদ্ধ বিচ্ছেদ করতে চাই না।।।আপনারা কালই চলে আসুন একবার আকাশপুরী থেকে ঘুরে যান আর জলপুরীর রাজকন্যাদের দিয়ে যান।।।সাথে নতুন রাজার সাথেও সাক্ষাত হয়ে যাবে(রাজা২)
.
--হুমমম আপনার কথা শুনে ভালো লাগলো।।।আর দাওয়াতের জন্য শুকরিয়া।।।।কালই আমরা আসছি আপনাদের ওখানে।(রাজা)
.
--হুমমম আসুন।(রাজা২)
।।।।
।।।।
ওনাদের কথা শেষ হলো।।।আমিও অনেকটা খুশি হয়ে গেলাম।।।যাক কোনো কাজ।।।।সেনাপতিকে দেখলাম একটু আগে।।।কিন্তু কোথায় গেলো এখন।।।সালার ওকে পেলে এখন ইচ্ছা মতো ঝেড়ে দিবো।।।শালা এতো ভালো বুদ্ধি না দিয়ে কোথাকার কি ট্রিশুল না কি খুজতে নিয়ে যাচ্ছে।।।এখন বুঝতে পারলাম মাথায় বুদ্ধি থাকলে সবই সম্ভব।।।।খুশি হয়ে আমি নিলার কাছে আসলাম খবরটা জানাতে ওকে।দেখি এখনো শুয়ে আছে।।।রাজকুমারীরা কি এতো অলস হয় নাকি।।।।।।
।।।।
।।।
।।
।
(((((চলবে)))))
।
।।
।।।
।।।।